ভাল থেকো ক্যাসপার !
31 August 2015 Latest
মা বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা ক্যাসপারের। বড় হলে বাবার মতো ট্রেকার হবে। বিয়ার গ্রিলের মতোও হতে পারে, ওই শো’টার সবগুলো পর্ব ক্যাসপারের মুখস্ত। তাই সে নিজের কাজ এখন থেকেই নিজে করে। ভাত খাওয়া, খেলা শেষে নিজের খেলনা গুছিয়ে রাখা, টয়লেট শেষে নিজে নিজেই পানি ঢেলে দেয়া। বাজে গন্ধ ক্যাসপার একফোঁটাও পছন্দ করে না।
তখনই বাঁধলো সমস্যাটা। ক্যাসপার দেখেছে তার টয়লেটের সাথে ঝরঝর করে রক্ত যাচ্ছে। বোঝেনি, কী সর্বনাশটা চলছে নিজের ভেতর। ব্যথা পায়, কাঁদে, কাউকে বলেনা। চার বছরের বাচ্চা, কীভাবে বোঝাবে? একদিন মায়ের সন্দেহ হলো। ছেলে টয়লেটে কাঁদছে, জোর করে ভেতরে গেলেন। এবং রক্তের পরিমান দেখে স্তব্ধ হয়ে পড়লেন।
এতো রক্ত! এরপরে চট্টগ্রামের রয়েল ক্লিনিক নেয়া হলো। তারপরে অবনতি হলে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও পরবর্তীতে পিজিতে নেয়া হয়। এখানেই ক্যাসপারের রক্তক্ষরণের কারণ শনাক্ত ও তা অপসারণ করা সম্ভব হয়। ২৭ আগস্ট ক্যাসপারের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। গত জুম্মার নামাজের পরে সারাদেশে ক্যাসপারের জন্য দোয়া করা হয়।
পরের দিন ডাক্তার ইমরুল জানান, ‘হঠাৎ করেই ক্যাসপারের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইমার্জেন্সি অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেয় ওর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। ব্লিডিং এর কারণ এবং অবস্থান সনাক্ত করা এবং ব্লিডিং বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাত গতরাতে এ অপারেশন শুরু করা হয়। ‘মেকলস ডিভার্টিকুলাম’ শনাক্ত হয় একটু ব্যতিক্রমী অবস্থায় এবং অবস্থানে। আর ওটাই ছিলো ওর ব্লিডিং এর কারণ। রোগাক্রান্ত অংশটি কেটে বাদ দেয়া হয় ওর ইনটেস্টাইন থেকে। ২৪ ঘন্টা পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে থাকবে ক্যাসপার।’
শনিবার ডাক্তার ইমরুল হাসান ওয়ার্সি জানান, ইউরিন আউটপুট খুবই কম। ব্লাড প্রেসার খুবই কম। হৃদ স্পন্দন অনেক বেশী। সব মিলিয়ে ওর অবস্থা খুব একটা ভালো না।
রোববার সকালে তিনি ক্যাসপারের আপডেট জানান, ‘ক্যাসপারের ইউরিন আউটপুট কিছুটা বেড়েছে। ব্লাড প্রেসার এখনো আনস্টেবল। সার্বিক ভাবে ওর অবস্থা গতকালের মতোই। কিছু কিছু প্যারামিটারে সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো ঝুঁকির মধ্যেই আছে। যে কোনও সময় ওর অবস্থা যেকোন দিকে মোড় নিতে পারে। ক্যাসপার সংগ্রাম করছে। আমরাও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।’
কিন্তু সে সংগ্রাম সফল হয় নি। ক্যাসপার আর ফিরবে না। বিকাল ৪ টার দিকে ক্যান্সারের সঙ্গে হেরে যায় ক্যাসপার।
না ফেরার দেশে চলে গেল ক্যাসপার। ঘরে ফেরা হলো না তার। বাবার সাথে আর সে পাহাড়ে উঠতে চাইবে না। দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটতেই চাইবে না সে। অজানা কোনো রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে শুয়ে পড়বে না ছোট্ট সোনা মুহাম্মদ সাদমান ক্যাসপার।
ভাল থেকো ক্যাসপার !
(সংগৃহীত)
Comments
comments