এবারের “জল জ্যোৎস্না বিলাস” সিলেটে হয়েছে। তাই একটু বেশি সতর্ক ছিলাম। কারন, সিলেটের অভিজ্ঞতা প্রায় সব সময় কিছুটা বিরক্তি মাখা থাকে। যাইহোক, সেগুলা বাদ দিলে অসাধারন হয়েছে এই ভ্রমণ। আমার জন্য অর্ধ ভ্রমণ। কারন আমি একদিনের জন্য গিয়েছিলাম। অন্য কেউ হয়তো ওভাবে যেতো না। কিন্তু, আমি এমন সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাই নাই।
অনেক এদিক সেদিক করে যাওয়া স্থির হলো ৬ তারিখ রাতে। তখন সিলেটে সবকিছু ঠিক করে রাখা আছে। রাতের বাসে আমরা ঢাকা ছাড়লাম। ভোরে পৌছালাম সিলেট শহর। সকালে নাস্তা করতে বাকিদের রেখে আমি গেলাম আমার আগের নির্ধারিত সব জায়গাগুলাতে। কিন্তু, ঐ যে সিলেট কেনো জানিনা আমার জন্য কিছুনা কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। যাইহোক, হোটেল আল আছমাতে উঠে বাকিদের কে ডাকলাম। এই ফাকে লেগুনা ঠিক করা হয়েছিলো সেটাও চলে আসলো। বাকিরা যখন হোটেলে আসলো, তাদের রেখে আমি গেলাম ফিরতি টিকেট কাটতে। সব কাজ শেষে সবাই মিলে রউনা হলাম রাতারগুলের উদ্দেশ্যে। ওহ, মাঝপথে আমাদের সাথে যোগ দিলেন আরো দুজন। সব মিলিয়ে আমাদের নিয়ে লেগুনা ছুটে চলল ঘন্টা দেড়েকের রোলার কোস্টার যাত্রায়। তবে সবাই সব কষ্ট ভুলে গেলো রাতারগুলের অপার সুন্দর্য দেখে। একটা বড় নৌকা ভাড়া নিয়ে আমরা চললাম সেই সবুজের স্বর্গে, যেখানে স্বপ্ন খেলা করে।
এই সবুজ জলা বনের মায়া কাটানো কঠিন। তাই আমরা অনেকটা সময় কাটালাম বনের ভিতরে। যদিয়ও সাপ বা বানরের দেখা পাই নাই। অনেকেই বলে এসবের দেখা পেয়েছিলো। কিন্তু, আমরা পাই নাই এমন কিছু। তবে কিছু অতি উৎসাহি জনতার উচ্চ আওয়াজে মাইক বাজানো বা চিৎকারে এই শান্ত জলা বনটা হয়তো আমাদের মতোই বিরক্ত হয়। আমাদের উচিৎ এসব থেকে বিরত থেকে পরিবেশকে উপভোগ করা। যাইহোক, এসব দেখতে দেখতে আমরা ফিরে এলাম ঘাটে। সেখানে দাড় করানো লেগুনা দিয়ে এবারের যাত্রা বিছানাকান্দি।
রাস্তার অবস্থা খারাপ, তবে আগের চাইতে অনেক ভালো। রাস্তা ঠিক করা হচ্ছে, সামনে আরো ভালো হবে। তবে দুপাশে দারুন প্রকৃতি দেখতে দেখতে হাদারপারে এসে থামলাম। আগে থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করা না থাকলে, দরদাম করে করে নিতে হবে। তবে সেখানে মাঝিদের দাম হাকানোতে ভয় পেতে পারেন। হা হা হা, ভয়কে জয় করে নৌকা ঠিক করে পারি জমালাম পান্তুমাই ঝর্ণা দেখতে। আফসোস নিয়ে দেখলাম এই ঝর্ণা, কারন ভারতের ভিতরে এই ঝর্ণা দেখতে হচ্ছে সিমান্তের খুব কাছে দাঁড়িয়ে। তবে ঝর্ণা দেখতে গিয়ে চারপাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতে আবার চলা শুরু বিছানাকান্দিতে। শিতল জলধারা আপনার মন অ শরীর জুড়িয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। আর প্রকৃতির রুপ তো আছেই। চোখ ফেরানো কঠিন এসব থেকে।
ভারতীয় পণ্যের হাট বসে সন্ধ্যা পর্যন্ত, সেটা দেখে নিতে পারেন। আর দুপুরের খাবার যদি সাথে করে কিনে নিয়ে যান, সেটাই ভালো। কারন, ঐখানে একটাই খাবার হোটেল। আর তাই হয়তো, মানের চাইতে দাম অনেক বেশি। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, এবারে ফেরার পালা। নৌকা থেকে নেমে আমাদের ভাড়া করা লেগুনায় আবার ফিরে আসা সিলেট শহরে। হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ুন রাতের খাবারের জন্য। পাঁচভাই, পানসী বা আপনার পছন্দের কোন রেস্টুরেন্টে হতে পারে রাতের ভুরিভোজ। তারপর শহরটা একটু ঘুরে ফিরে আসুন হোটেলে। আজকের মতো এখানেই যাত্রা বিরতি। কথা হবে অন্যকোন দিন।