সেই দিন বাবা খুব চিন্তায় ছিলেন। বাবাকে খুব অস্থির লাগছিল। তিনি এই ঘর ওই ঘর করছিলেন। বাবা খুব চেষ্টা করছিলেন শান্ত থাকার এবং কাউকে কিছু বুঝতে না দেয়ার। কিন্তু মা কিভাবে যেন সব বুঝে ফেললেন এবং ঘরের আরেকজনও কারণটা ধরতে পেরেছিলেন। আমি ছোট ছিলাম তাই আমি বুঝতে পারিনি যে, কেন বাবা এত অস্থির হয়ে আছেন। কেনই বা বাজারে যাবেন বলেও না গিয়ে চিন্তিত মুখে ঘরে রয়েছেন। অনেকক্ষণ সময় এমনটা কাটল। বাবা জানতেন তার মানিব্যাগ খালি কোনো টাকা নেই। তারপরও সান্ত্বনা স্বরূপ যখন মানিব্যাগটা হাতে নিয়ে খুললেন তখন অবাক কণ্ঠে বলে উঠলেন, “আরে টাকা আসলো কোথায় থেকে?”
আসলে যা হয়েছিল তা বড় হয়ে বুঝতে পেরেছিলাম। বাবার চিন্তার কারণটা ছিল মাসের শেষ, তার সাথে সাথে ঘরের বাজারও শেষ। তাই বাজার করতে হবে, কিন্তু হাতে কোন টাকা ছিল না। তাই বাবা অস্থির হয়েছিলেন কিন্তু কাউকে বলতে পারছিলেন না। মার সাথে সাথে আরেকজন বুঝতে পেরেছিলেন এই অবস্থাটা। সেই আরেকজনটি হচ্ছেন তাদের বড় মেয়ে। যে জানতো বাবার হাতে টাকা নেই। কিন্তু সে টাকা দিতে গেলেও বাবা তা নিবেন না। তাই সে চুপি চুপি গিয়ে বাবার মানিব্যাগে টাকা রেখে আসে যাতে বাবা বুঝতে না পারে। সেই টাকা মানিব্যাগে দেখেই বাবা অবাক হয়েছিলেন। ব্যাপারটা বাবা বুঝতে না পারলেও মা কিন্তু ধরতে পেরেছিল যে এই কাজটা কে করতে পারে। সাথে সাথে এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে মেয়ে বড় হয়ে গেছে। বাবার কঠিন সময়ে পাশে এসে দাঁড়াতে শিখে গেছে।
পরিবারটাকে যদি মঞ্চের সাথে তুলনা করা হয়, এবং পরিবারের মানুষগুলোকে যদি এই মঞ্চের অভিনেতা বা অভিনেত্রী ধরা হয় এবং জিজ্ঞাস করা হয় এদের মধ্যে সেরা অভিনেতা বা অভিনেত্রী কে? তাহলে বলব “মা” সেরা অভিনেত্রী। কারণ মা সব বুঝেন এবং বুঝেও মাঝে মধ্যে না বুঝার মত কঠিন অভিনয়টা করে থাকেন। এবং বাবা হচ্ছেন সেরা অভিনেতা কারণ বাবা হাজার কষ্ট, চিন্তা, ধাক্কা ইত্যাদি নিজের মধ্যে রেখে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে অভিনয় করেন ভাল আছি।