চীরঞ্জীব সঞ্জীব


সমুদ্রে বেড়াতে গিয়েছে কাজলের বন্ধু। সেখানে এক দূর্ঘটনা ঘটে গেলো মেয়েটার জীবনে। অনেক সাধনার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই ফুরিয়ে গেলো। কাজলের কলমে জন্ম নিলো সুরের আলেখ্য ‘সমুদ্র সন্তান’। লেখা হলো-

“চোখটা এত পোড়ায় কেন?
ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও,
সমুদ্র কি তোমার ছেলে?
আদর দিয়ে চোখে মাখাও!।
বুক জুড়ে এই বেজন শহর
হা হা শূণ্য আকাশ কাঁপাও,
আকাশ ঘিরে শঙ্খচীলের
শরীর চেরা কান্না থামাও,”

যার লেখা প্রতিটা গান জীবন থেকে মুক্তো কুড়োনো গীতিকাব্য। সেই কাজল জীবনের গদ্য থেকে বিদায় নিয়ে তেতাল্লিশ বছরের চীরতরুন থেকে গেলেন আমাদের কাছে।

এতক্ষনে আপনারা নিশ্চয় বুঝেছেন সঞ্জীব চৌধুরীর কথা বলছি। নব্বইয়ের আণ্দোলনে গলায় হারমনিয়াম ঝুলিয়ে মুক্ত মঞ্চে গাইতেন স্বৈরাচার বিরোধী গান।  আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে আবৃত্তি করতেন স্বরচিত কবিতা। নব্বইয়ের উত্তাল দিনে তার লেখা “আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া/ সন্ধানও করিয়া / স্বপনেরই পাখি ধরতে চাই / আমার স্বপনেরই কথা বলতে চাই …” কবিতাটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। পরে ‘দলছুট’ ব্যান্ডে এই কবিতাটি, ‘গান’ হয়ে ওঠে সঞ্জীবের কন্ঠে। প্রতিবাদমুখর এই মানুষটিই আবার ধীর-স্থির লেখক, সম্পাদক। নিজে যেমন লিখেছেন অন্যকে দিয়ে লিখিয়েও নিয়েছেন। আজকের অনেক প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক তাঁর হাতে গড়া।

গীতিকার, সুরকার আর গায়কীর জন্য বাংলাদেশ তাঁকে চেনে। ১৯৯৬ সালে সঞ্জীব চৌধুরী ও বাপ্পা মজুমদারের মেলবন্ধনে গড়ে ওঠে গানের দল ‘দলছুট’।

সমুদ্র সন্তান, বায়স্কোপ, কার ছবি নেই,  তোমাকেই বলে দেব, গাড়ি চলে না চলে না, তোমার ভাজ খুলো আনন্দ দেখাও, আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিলে চাঁদ,  রঙ্গিলা পাল, রিক্সা, বয়স হলো সাতাশ, এই নষ্ট শহরে, হাতের ওপর হাতের পরশ, একটুখানি সবুজ, জোৎস্না বিহার, প্রভৃতি জনপ্রিয় গানের জনক সঞ্জীব চৌধুরী।

২০০৭ সালের ১৯শে নভেম্বর সঞ্জীব চলে যান না ফেরার দেশে। সমাজ ও রাজনীতি সচেতন মানুষটি মরনেও নিজেরে উজাড় করে দিয়ে গেলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে গবেষণার জন্য তাঁর দেহ সংরক্ষিত। মরনেও তিনি চীরঞ্জীব স্বর্ণলতা। সঞ্জীব চৌধুরী বেঁচে আছেন কবিতায়, গানে সুরে, সঙ্গীতপ্রেমীদের মননে।

Comments

comments